স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের জন্য দক্ষতা-নির্ভর সহযোগী স্বাস্থ্য জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা প্রস্তুত করার নিমিত্তে উক্ত অধিদপ্তরকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে বেটার হেলথ ইন বাংলাদেশ। চিকিৎসক-নার্স সহযোগী স্বাস্থ্য জনশক্তির আওতায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসি টেকনিশিয়ান, রেডিওথেরাপিস্ট, ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট, ইত্যাদি ধরণের স্বাস্থ্য জনশক্তি অন্তর্ভূক্ত। এই কাজ সম্পাদনের জন্য বিএইচবি অর্ক ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে। অর্ক ফাউন্ডেশন গত ১৫ জুন ২০২১ তার ইনসেপন প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেছে। গত ৯ আগস্ট ২০২১ আর একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এএইচএম এনায়েত হোসেন সভাপতিত্ব করেন। কর্মশালা আয়োজনের উদ্দেশ্য অর্ক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রথম ডেলিভারেবল অর্থাৎ সহযোগী স্বাস্থ্য জনবল সম্পর্কিত বেইজলাইন সিচুয়েশন প্রতিবেদন উপস্থাপন করা। এই প্রতিবেদনে কারিকুলাম, শিক্ষক জনবল, প্রতিষ্ঠান-ভিত্তিক জনবল কাঠামো, পাশকৃত সহযোগী স্বাস্থ্য জনবলের কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভূক্ত ছিল। প্রধান প্রধান পর্যবেক্ষণ এবং সুপারিশগুলো নিম্নরূপঃ
- বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার প্রতিটিতে একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু, নুতন নুতন ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি স্থাপনের বিষয়ে সরকারের কোন পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি। তাই মেডিকেল কলেজের অনুরূপ প্রতিটি জেলায় একটি করে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা যেতে পারে।
- বিভিন্ন ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির মধ্যে শিক্ষক ও অন্যান্য জনবলের সংখ্যায় বেশ তারতম্য লক্ষ্যণীয়। সেই সাথে প্রতিটিতেই জনবলের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। কাজেই প্রতিটি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে দ সৃষ্টিসহ একই ধরণের জনবল কাঠামো সৃষ্টির সুপারিশ করা গেলো।
- বর্তমানে কোন ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতেই শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সহায়ক জনবলের অব্যাহত পেশাগত উন্নয়ন সাধনে সহায়ক ওয়েব-ভিত্তিক কোন প্লাটফর্ম নেই। একই সাথে কোন প্রতিষ্ঠানেই সহযোগী স্বাস্থ্য জনবল শিক্ষা ইউনিট নেই। কাজেই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই একটি করে সহযোগী স্বাস্থ্য জনবল শিক্ষা ইউনিট, ডিজিটাল লাইব্রেরি এ ই-লার্নিং সিস্টেম স্থাপনের সুপারিশ করা হলো।
- দেখা গেছে যে, সহযোগী স্বাস্থ্য জনশক্তি শিক্ষা কার্যক্রমের সকল শাখার কারিকুলামে মৌলিক বিষয়গুলোতে প্রয়োজন নির্বিশেষে সম-পরিমাণ কনটেন্ট রয়েছে যা অনাবশ্যক। কাজেই প্রতিটি কোর্সের প্রয়োজন-ভিত্তিক যৌক্তিক কনটেন্ট রাখার সুপারিশ করা হলো।
- বাংলাদেশ হেলত ডিপার্টমেন্টাল নন-মেডিক্যাল রিক্রুটমেন্ট রুল ২০১৮-তে অনেক দরকারি বিষয় অনুপুস্থিত। কাজেই এই রুলটি সংশোধনপূর্বক সমগ্রেডে একই ধরণের পদ সৃষ্টির সুযোগ তৈরির সুপারিশ করা গেলো।
- স্বাস্থ্য কারিগরি বিষয়ে অধ্যয়নরত বা অধ্যয়ন সম্পন্নকারি শিক্ষার্থীদেরকে অনেক কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হতে হয়। যেমন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। সেবাপ্রাপ্তি এবং জটিলতা নিরসন এবং ভোগান্তি হ্রাসকল্পে একটি একক সেবা কেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করা গেল।
অন্যান্যের মধ্যে কর্মশালায় বিএইচবির প্রকল্প পরিচালক ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির অধ্যক্ষ ও শিক্ষা পেশাজীবি উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারি সকলেই উল্লেখ করেন যে, পরামর্শকগণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে আনতে পেরেছেন। সবাই আশা প্রকাশ করেন যে, সুারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশে দক্ষতা-নির্ভর সহযোগী স্বাস্থ্য জনশক্তি গড়ে তোলার পথে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হতে পারে।